বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয় কেন । বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর 2025
আজকে আমরা জানবো বাঙালি সংকর জাতি বা বাঙালিকে মিশ্র জাতি বলা হয় কেন এই সম্পর্কে। আসলে ছোট পরিসরে বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় দেওয়া অসম্ভব। তবে এটা মানতে হবে যে বাঙালি সংকর জাতি কারন বহুকাল ধরেই এই বাঙালি জাতি নানা জাতির সংমিশ্রণে গঠিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতির রক্ত বাঙালি জাতির শিরা উপশিরাই আজও প্রবাহিত। এ জন্যই বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয়।
বাঙালি জাতির মাঝে যে সকল জাতির রক্তপ্রবাহ বিদ্যমান সেটি অতি সংক্ষেপে আলোচনা করলেই বুজতে পারা যাবে বাঙালি মিশ্র জাতি কেন , কেনই বা বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয়।
বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয় কেন
নৃতাত্ত্বিকরা একমত যে বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে অনেক জাতির সংমিশ্রনে একটি দেশ হয়েছে। এর আগমনের অনেক আগেই খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে আর্যরা আগে থেকেই বাঙালি জাতির সাথে জাতিগতভাবে মিশ্রিত ছিল। এটা বলা হয় যে মানুষের উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা, কিন্তু কিছু তারা প্রথমে উত্তরাঞ্চলে চলে যায় মধ্যপ্রাচ্য এবং তারপর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তার প্রভাব এই উপমহাদেশেও লক্ষ করা যায়।
আপনি কি শিক্ষা, ট্রেনের খবর, ট্রাভেল গাইড, মার্কেট গাইড সহ সকল জেলার আপডেট পেতে চান ? তাহলে আপনি উঁকি মারতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ এ!!
পরবর্তী সময়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই অঞ্চলে থেকে যায়। বিভিন্ন জাতির রক্ত বাঙালি জাতির শিরা উপশিরায় আজও প্রবাহিত। এজন্যই বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয়।
বাংলাদেশের প্রধান জাতি:
- নেগ্রিটো
- প্রোটো – অস্ট্রালয়েড বা অস্ট্রিক
- মঙ্গোলয়েড
- ভূমধ্যসাগরীয় বা দ্রাবিড়
- ওয়েস্টার্ন ব্র্যাকিসেফালস;
- নর্ডিক আর্য
- তুর্কো-ইরান
১। নেগ্রিটো
নেগ্রিটো আদিবাসীরাই প্রথম জাতি যারা আফ্রিকা থেকে সর্বপ্রথম এই উপমহাদেশে এসে বাঙালি জাতির সাথে মিশে গিয়েছিল। তারা ছিল বড় মাথাওয়ালা মানুষ।তারা এই উপমহাদেশে আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জ তে তাদের আদিবাস গড়ে তুলে।জারাওয়াস, ওঙ্গেস, সেন্টিনেলিজ এবং গ্রেট আন্দামানিজ এসবেরই কিছু উদাহরণ।তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোও বাঙালিকে সংকর জাতি তে রুপান্তর এর কারন হিসাবে গণ্য।
নেগ্রিটো জনগোষ্ঠী দের বৈশিষ্ট্যঃ
- গায়ের রংঃ চকলেট বা জেট কালো
- নাকঃমাংসল, চ্যাপ্টা এবং চওড়া
- কানঃ ছোট
- ঠোঁটঃ মোটা
- চোয়ালঃ বড় ইত্যাদি।
২। প্রোটো – অস্ট্রালয়েড বা অস্ট্রিক
তারা নেগ্রিটো জনগোষ্ঠীদের পরেই এই ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন। তারা প্রায় ৫০০০ বছর আগে ভারতে এসেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ভারতের অস্ট্রিকরা মাঝারি উচ্চতার, কালোবর্ণের, লম্বা মাথা এবং চ্যাপ্টা নাক বিশিস্ট। অস্ট্রিকরা ভারতীয় সভ্যতার ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। তারা ধান এবং সবজি চাষ করত এবং আখ থেকে চিনি তৈরি করত।
এখন এদের ভারত, মায়ানমার এবং এর কিছু অংশে মানুষ পাওয়া যায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বীপপুঞ্জেও পাওয়া যায়। তাদের বৈশিষ্ট্যগুলোও বাঙালিকে সংকর জাতি তে রুপান্তরের কারন হিসাবে গণ্য। প্রোটো – অস্ট্রালয়েড বা অস্ট্রিকদের বৈশিষ্ট্যঃ
- গায়ের রং: কালো
- চুল: ঢেউ খেলানো চুল
- লম্বা মাথা
- বাহু ও পা: লম্বা এবং কাঁটা
৩। মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠী
এই মানুষদের উত্তরআঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারতের পূর্ব অংশ , আসাম, নাগাল্যান্ড রাজ্যে, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং ত্রিপুরা রাজ্যে এদের আধিপত্য। এছাডাও পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং লাদাখে তাদের পাওয়া যায়। সাধারণত তারা হয় হলুদ বর্ণ, উচ্চ গালের হাড়যুক্ত,বিক্ষিপ্ত চুল এবং মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন।
মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠী দের বৈশিষ্ট্যঃ
- ত্বকের রঙ: বাদামী থেকে হলুদ
- চুল: কালো এবং সোজা
- নাক: সমতল
৪। ভূমধ্যসাগরীয় বা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী
দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী বিভিন্ন উপ-গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল যেমন প্যালিও-ভূমধ্যসাগরীয় ,আসল ভূমধ্যসাগরীয়, এবং ওরিয়েন্টাল ভূমধ্যসাগরীয়। তারা এই উপমহাদেশে নগরীয় সভ্যতা গড়ে তুলেছে বলে ধারনা করা হয় ।যার দেহাবশেষ পাওয়া গেছে মহেঞ্জো-দারোতে, হরপ্পা এবং অন্যান্য সিন্ধু নগরী ।
৫। ওয়েস্টার্ন ব্র্যাকিসেফালস
এদের মধ্যে রয়েছে আলপাইন জনগোষ্ঠী, ডিনারিকস এবং আর্মেনয়েডস । তাছাড়া পার্সি ও কোদাভারাও এই বিভাগে পড়ে।তারা হল বিস্তৃত মাথার মানুষ । দেশের পশ্চিম দিকে প্রধানত তাদের বসবাস।গঙ্গা উপত্যকা এবং ব-দ্বীপ, কাশ্মীরের কিছু অংশ, কাথিয়াওয়ার, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং তামিল নাড়ুতেও এদের দেখা যেত।
৬। নর্ডিক আর্য
এই উপজাতিটি ছিল ভারতের শেষ জনগোষ্ঠী। তারা ভারতে এসেছে 1000 থেকে 1500 খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এখন প্রধানত ভারতের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পাওয়া যায়।
৭।তুর্কো-ইরান
এই ধরনের মানুষ বেলুচিস্তানের , এবং সীমান্ত প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। এসব জনগোষ্ঠী দের প্রাদুর্ভাব ও আভিজাত্তের কারনেই আজ বাঙালি সংকর জাতি হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে খেয়াল করুন
বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর
যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গিয়েছিল তাদের একট দল বাংলাদেশের মাটিতেও পাড়ি দিয়েছিলেন ৫০০০ বছরেরও আগে। এরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কয়েক হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে। এই লোকেরা দিনে দিনে ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটায়। বিভিন্ন সময়ে এই বিভিন্ন শ্রেনির জনগোষ্ঠীর আগমন এই দেশে লক্ষণীয়। তাদের বৈবাহিক জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্মে তাদের রক্ত প্রবাহিত হয়ে আসছে। যার জন্য বাঙ্গালিদের মধ্যে এই সংকরায়ন।
বাঙালিকে সংকর জাতি বা মিশ্র জাতি বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ বাঙালি মিশ্র জাতি কারন বহুকাল ধরেই এই বাঙালি জাতি নানা জাতির সংমিশ্রণে গঠিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতির রক্ত বাঙালি জাতির শিরা উপশিরাই আজও প্রবাহিত।এটিই মুল কারন বাঙালিকে সংকর জাতি বলার।