বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি: কম খরচে আদা চাষ, দ্বিগুণের চেয়ে বেশি লাভ
শুরু হয়ে গেল আদা চাষ এর মৌসুম। আদা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মসলা। প্রতিবছর প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন আদা উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে, যা মোট চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। তাইতো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আদা চাষের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছেন।
চলতি এপ্রিল-মে মাসকে বলা হয় আদা চাষের উত্তম মৌসুম। ভালো ফলন পেতে উপযুক্ত মাটি, আদা লাগানোর সময়, আদা লাগানোর স্থান, জাত নির্বাচন এবং মাটি প্রস্তুত এর বিকল্প নেই। এখানে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন কিভাবে বস্তায় আদা চাষ করলে বেশি লাভবান হতে পারবে কৃষক।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, একই সাথে খাবারের চাহিদা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই খাবার চাইলে মেটাতে শুধুমাত্র আবাদি জমির উপর নির্ভর করা বোকামি। পরিত্যক্ত জমি,ছাদে কিংবা বস্তায় চাষাবাদ করলে এই চাহিদা অনেকাংশে মিটানো সম্ভব।
বস্তায় আদা চাষ করার প্রধান সুবিধা হল একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়। এই পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ কম এবং বস্তায় মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ করে এক থেকে দুই কেজি আদা উৎপাদন করা যায়। যদি কোন গাছ রোগাক্রান্ত বা সমস্যা মনে হয় তা সহজে সরিয়ে নেওয়া যায়।
উপযুক্ত মাটি
বস্তায় আদা চাষ এর জন্য উঁচু জায়গা ও জৈব সার সমৃদ্ধ দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি সব থেকে উত্তম।
বস্তায় আদা লাগানোর সময়
আদা চাষের জন্য এপ্রিল মে মাসে আদার কন্দ রোপণ করতে হয় তবে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ আদা চাষের উপযুক্ত সময়।
বস্তায় আদা লাগানোর স্থান
বসতবাড়িতে বা বাগানে 30 থেকে 40% ছায়াযুক্ত স্থানে আদা ভালো হয়। সম্পূর্ণ ছায়া বা আলোতে ভালো হয় না। তাই দিনের দুই থেকে তিন ভাগ আলো আসে এমন জায়গায় বস্তা রাখতে হবে।
আদার জাত নির্বাচন
বাংলাদেশ বস্তাই আলাদা চাষের জন্য জনপ্রিয় ত্রিনীতি জাত হলো বাড়ি আদা১, বাড়ি আদা ২ এবং বাড়ি আদা ৩।
আপনি কি শিক্ষা, ট্রেনের খবর, ট্রাভেল গাইড, মার্কেট গাইড সহ সকল জেলার আপডেট পেতে চান ? তাহলে আপনি উঁকি মারতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ এ!!
মাটি প্রস্তুত এবং মাটি তৈরি
বস্তায় আলাদা চাষের জন্য আদার কন্দ রোপণের ১৫ দিন আগে মাটি ও সারপ্রস্তুত করতে হবে। আদা কন্দ বা রাইজোম মসলা জাতীয় ফসল তাই মাটি যত নরম ও ঝরঝরে হবে তত ভালো। এতে রাইজোম সহজেই মাটির নিচে বড় হতে পারে। শক্ত মাটিতে আদার ফলন কম হয় কারণ শক্ত মাটি হওয়ায় রাইজুম বড় হতে পারে না।
বস্তায় আদা চাষের জন্য সিমেন্টের বস্তা সবচেয়ে উত্তম একটি সিমেন্টের বস্তা কেটে দুইটি আদার বস্তা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে বস্তার খরচ ৫০ শতাংশ কমে যাবে। প্রতি বস্তার মাটি প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন হবেঃ
- ১৫ কেজি মাটি
- পচা গোবর ৫-৬ কেজি
- টিএসপি ২০ গ্রাম
- পটাশ ১০ গ্রাম
- জিপসাম ১০ গ্রাম
- জিংক ৫ গ্রাম
- বোরন ৫ গ্রাম
- দানাদার কীটনাশক ১০ গ্রাম
- কাঠের গোড়ায ১ কেজি
- ছাই এক কেজি (সম্ভব হলে)
- বালু এক কেজি (বেলে দোঁআশ মাটি হলে দরকার নেই)
সমস্ত সার, মাটি, দানাদার কীটনাশক, কাঠের গুড়া এবং বালু ভালোভাবে মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ দিন কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। 12 থেকে 15 দিন পর পলিথিন উঠিয়ে মাটি উল্টাপাল্টা করে কমপক্ষে 24 ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর বস্তায় ভরে দুই থেকে তিন দিন রেখে আধার বীজ বপন করতে হবে।
বস্তা প্রস্তুত পদ্ধতি
এমনভাবে ভর্তি করতে হবে যাতে বস্তার উপরের অংশ দুই থেকে তিন ইঞ্চি ফাঁকা থাকে। বৃষ্টির পানিতে জমাট ববাঁধে না এমন জায়গায় সারীতে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর পর পাশাপাশি দুইটি বস্তা স্থাপন করতে হবে। মাঝখান দিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা রাখতে হবে যাতে সহজে চলাফেরা করা যায় এবং পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। বস্তার ভিতর আদার কন্দ দুই থেকে চার ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে বীজ লাগানোর পর মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে।
বৃষ্টি না হলে হালকা ছিটানো পানি দিতে হবে। মাটি ভরাটের আগে বস্তার নিচে সাইডে চার-পাঁচটি ফুটা করে দিতে হবে যাতে বৃষ্টিতে বস্তায় পানি জমে না থাকে।
সার প্রয়োগ
আদা চাষ এর জন্য তিন কিস্তিতে স্যার প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তিতে আদার কন্দ রোপণের ৫০ দিন পরে বস্তা প্রতি ১০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫ গ্রাম এম ও পি একত্রে প্রয়োগ করতে হবে।
দ্বিতীয় কিস্তিতে আদার কন্দ রোপনের ৮০ দিন পরে বস্তা প্রতি ৫ গ্রাম করে ইউরিয়া এবং পটাশ গাছের চারপাশে ছিটিয়ে দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় কিস্তিতে ১১০ দিন পরে পুনরায় ইউরিয়া এবং পটাশ ৫ গ্রাম করে মিশিয়ে দিতে হবে।
আদা উত্তোলন
সাধারণত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে এসব আদা তোলা যায় বিশেষ করে বারি- ১ ও বারি-২ আদা। আদার পাতা হলুদ হয়ে আসলে আদার পরিপক্ক হয়ে যায়। উপযুক্ত পরিচর্যায় প্রতি বস্তায় গড়ে এক কেজি ফলন হয়ে থাকে তবে সর্বোচ্চ দুই কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যায়।
আদায় সাধারণত রোগবালাই একটু কম হয়। এরপরও যদি রোগবালয়ের আক্রমণ দেখা যায় তাহলে আপনার নিকটস্থ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে আপডেট পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
Special Reference: Mohammad Farid