গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত | গাইবান্ধা জেলার থানা কয়টি 2024
গাইবান্ধা (Gaibandha District) রংপুর বিভাগের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে একটি। গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ও গাইবান্ধা জেলার থানা কয়টি এবং বিখ্যাত ব্যক্তি সহ নানা অজানা তথ্য জানব।
গাইবান্ধা জেলার ২৫,৬২,২৩২ জনসংখ্যা সহ এর মোট আয়তন ১৯৮০.৮৬ কিমি। এই জেলায় বেশ কিছু জনপ্রিয় নদী রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নদী হলঃ ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, বাঙালি, মানস, করতোয়া এই ছয়টি নদী। এই তথ্য গুলো মুটামুটি জানলেও আমরা অনেকেই জানি না এ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এবং বিখ্যাত মানুষ ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। আজ অনেক অজানা তথ্য জানাব যা আগে কখনো জানতেন না।
আপনি কি শিক্ষা, ট্রেনের খবর, ট্রাভেল গাইড, মার্কেট গাইড সহ সকল জেলার আপডেট পেতে চান ? তাহলে আপনি উঁকি মারতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ এ!!
গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
গাইবান্ধা জেলা তার অনন্য সংস্কৃতি এবং এর প্রাণবন্ত ঐতিহ্যবাহী উৎসবের জন্য বিখ্যাত। গাইবান্ধা জেলা ঐতিহ্যবাহী রসমঞ্জুরি এর জন্য বিখ্যাত। একটি প্রচলিত প্রবাদ রয়েছে সেটি হল স্বাদে ভরা রসমন্জুরির ঘ্রাণ, চরাঞ্চলের ভুট্টা-মরিচ হল গাইবান্ধার প্রাণ। এছাড়াও এখানকার ছানা ও মিষ্টি অনেক জনপ্রিয়।
গাইবান্ধা জেলা তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, যা ভ্রমন পিপাসু দের আকর্ষণ করে। এমনিতেই এটি নদী তীরবর্তী গ্রাম, সেই সাথে সবুজ ধানের ক্ষেত যা এলাকাটিকে প্রাণবন্ত করে তুলে। এছাড়াও এই জেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে যেমন প্রাচীন মঠ, মন্দির এবং মসজিদ।
গাইবান্ধা জেলার ইতিহাস
গাইবান্ধা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এবং এটি দেশের অন্যতম জনবহুল একটি জেলা। এই জেলার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যেখানে মানব বসতির প্রমাণ রয়েছে এই প্যালিওলিথিক যুগ থেকে। গাইবান্ধা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি যুগলে পরিনত হয়েছে যা এ জেলাকে প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপে পরিণত করেছে।
গাইবান্ধা জেলার উত্তরে রংপুর জেলা ও কুড়িগ্রাম জেলা অবস্থিত দক্ষিনে বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা অবস্থিত পূর্বে জামালপুর জেলা, তিস্তা ও যমুনা নদী অবস্থিত পশ্চিমে রংপুর জেলা , দিনাজপুর জেলা ও জয়পুরহাট জেলা অবস্থিত। জেলাটি বেশিরভাগই গ্রামীণ কৃষি নির্ভর। এর মোট জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ শহরে বসবাস করে।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা যার নাম গাইবান্ধা একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। গাইবান্দা জেলা আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় বিরাট নামক রাজার একটি বাণিজ্যিক রাজধানী ছিল। এই বিরাট রাজার ৬০ হাজার গাভী ছিল।
গাভী বা গরু কে উত্তরাঞ্চলের মানুষজন গাই ও বলে থাকেন। সেই গাই বা গাভী বাধার স্থান হিসেবে এই অঞ্চলকে গাইবান্ধা নামকরন করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১৫ ই আগস্ট গাইবান্ধা কে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ জেলায় মোট জনসংখ্যা ২৫৬২২৩২ জন। তার মধ্যেঃ
- নারীর সংখ্যা ১৩১৭৯৪৪ জন
- পুরুষের সংখ্যা ১২৩৮৬২১ জন
- শিক্ষার হার ৬৬. ৮৭ %
- পৌরসভার সংখ্যা মোট চারটি এবং
- ইউনিয়ন মোট ৮১ টি।
গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত তা জানার আগে চলুন জেনে নিই গাইবান্ধার থানা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
গাইবান্ধা জেলার থানা কয়টি
গাইবান্ধা জেলার সাতটি উপজেলা বা থানা রয়েছে। উপজেলা সমূহ হলঃ গাইবান্ধা সদর থানা, ফুলছরি, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ এবং সাদুল্লাপুর উপজেলা।
- গাইবান্ধা সদর উপজেলা
- ফুলছরি উপজেলা
- গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা
- পলাশবাড়ী উপজেলা
- সাঘাটা উপজেলা
- সুন্দরগঞ্জ উপজেলা এবং
- সাদুল্লাপুর উপজেলা
জেনে নিন বাংলাদেশের কোন জেলার কয়টি থানা
গাইবান্ধা, বাংলাদেশের এমন একটি জেলা যার অপরূপ লীলাভূমি এবং প্রাণবন্ত সংস্কৃতির জন্য সকলের নিকট সুপরিচিত। এটি গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত, যমুনা ও পদ্মা নদীর কাছাকাছি অবস্থিত।
এখানে বসবাসকারী লোকেরা অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অতিথিপরায়ণ। তাদের উত্সব এবং উদযাপনের সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রয়েছে। স্থানীয়রা একাধিক ধর্ম পালন করে এবং তাদের নিজ নিজ উত্সবগুলি অত্যন্ত উত্সাহের সাথে উদযাপন করে থাকে।
গাইবান্ধা জেলার থানা কয়টি তা জানলাম ত চলুন এবার জেনে নিই গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এবং এ জেলার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে।
জেনে নিন বাংলাদেশের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
গাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
গাইবান্ধা জেলার অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কাজী মুহাম্মদ বদরুদ্দোজামান , মাহমুদুজ্জামান বাবু, বদিউল আলম, কবি শাকের মাহমুদ এবং কবি হরিশচন্দ্র। তারা তাদের কৃত কর্মের জন্য যুগ যুগ ধরে গাইবান্ধার বিখ্যাত হয়ে আছেন।
বিখ্যাত ব্যক্তি
- শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ
- নাজীর মোহাম্মদ সরকার
- তুলসী লাহোরী
- দৌলাতুন্নেসা খাতুন
- শামসুল হক
- সদর উদ্দিন
- মোঃ কছির উদ্দিন
- আবুল হাসান শামসুদ্দিন
- আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
- মকবুলার রহমান সরকার
- ফজলে রাব্বি মিয়া এবং
- আহমেদ হোসেন।
তাছাড়া গাইবান্ধা তার সুস্বাদু স্থানীয় খাবার এবং ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের জন্য পরিচিত। এটি ভ্রমনের জন্য একটি সুন্দর জেলা। এ জেলায় অসংখ্য মন্দির এবং মসজিদের পাশাপাশি অনেক মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থান সমুহ
গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত তা জানলেই শুধু চলবে না। আমাদের সকলের জানা উচিত এ জেলার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। ত চলুন জেনে নিই চমৎকার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
জামালপুর শাহী মসজিদ
গাইবান্ধা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে সাদুল্লাপুর উপজেলায় জামালপুর গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত। ৬০০ বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম প্রচারে ইরাক থেকে আগত ৩৬০ জন দেউলিয়া বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্য থেকেই গাইবান্ধা শহরে আসেন সুফি হযরত শাহ জামাল (রাঃ)৷ তাহার তত্ত্বাবধানে এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তার নাম অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদ ও এই মসজিদের নামকরণ করা হয়।
গাইবান্ধা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার
গাইবান্ধা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ফুলছরি উপজেলার কোন্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি অবস্থিত। এটি মূলত একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। ২০০২ সালে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মানন্নয়নের লক্ষ্যে এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি তৈরি হয়।
এই সেন্টারটি মূলত সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়। এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি সম্পূর্ণ মাটির নিচে অবস্থিত এর নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য ইতিমধ্যো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন আওয়ার্ডে ভুুষিত হয়েছে।
গাইবান্ধা ড্রিমল্যান্ড এডুকেসনাল পার্ক
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণমারি গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক । ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রশিদু্ন্নবি চাঁদ ১৭ একর জমিতে এই পার্ক তৈরি করেন। শহরের অন্যতম এই বিনোদন কেন্দ্রটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ পার্ক টিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি গাছ গাছালি ফুলেল বাগান, ভাস্কর্য, বিভিন্ন স্থাপনা,বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র,, পলাশীর যুদ্ধ ক্ষেত্রের মানচিত্র,ও বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার ব্যবস্থা। পার্ক টিতে প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০ টাকা।
এসকেএস ইন রিসোর্ট
নারায়ণগঞ্জ হতে সরাসরি আসতে হলে মেঘলা পরিবহন এ করে সিটি কলেজ গেট এর সামনে নামা যাবে যেটি ধানমন্ডি তে। এখান থেকে মিরপুর থেকে নিউমার্কেট অভিমুখি সকল বাসে করে আসতে পারবেন। আসা করি আপনার জানা হয়ে গেছে গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এবং দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
এছারাও রয়েছেঃ
- বালাসি ঘাট
- বর্ধন কুঠি এবং
- গাইবান্ধা জমিদার বাড়ি ইত্যাদি।
আরও অজানা কিছু তথ্য
প্রশ্নঃ গাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত খাবার কোনটি ?
উত্তরঃ গাইবান্ধা ঐতিহ্যবাহী রসমঞ্জুরি এর জন্য বিখ্যাত। তাই বলা যায় এ জেলার বিখ্যাত খাবার রস মঞ্জুরি।
প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধে গাইবান্ধা কত নং সেক্টরে ছিল ?
উত্তরঃ মুক্তিযুদ্ধে গাইবান্ধা ১১নং সেক্টরে ছিল। এই সেক্টরটি অনেক বড় ছিল। বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগ এ সেক্টরের আওতাধীন ছিল।
প্রশ্নঃ গাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কে ?
উত্তরঃগাইবান্ধা জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা হলেন মৃত হাকিম উদ্দিন, মৃত সিতাংশু বর্মণ, মৃত নুরুল ইসলাম, মৃত মোজাম্মেল হক এবং মরহুম আহসান হাবিব সহ নাম না জানা অনেকেই।
গাইবান্ধা কিসের জন্য বিখ্যাত
উত্তরঃ গাইবান্ধা মুলত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, যা ভ্রমন পিপাসু দের আকর্ষণ করে। এমনিতেই এটি নদী তীরবর্তী গ্রাম, সেই সাথে সবুজ ধানের ক্ষেত যা এলাকাটিকে প্রাণবন্ত করে তুলে।
প্রশ্নঃ গাইবান্ধা জেলার আয়তন কত ?
উত্তরঃ এ জেলার ২৫,৬২,২৩২ জনসংখ্যা সহ এর মোট আয়তন ১৯৮০.৮৬ কিমি।
প্রশ্নঃ গাইবান্ধার পুরাতন নাম কি ?
উত্তরঃ গাইবান্ধা জেলার পুরাতন নাম হল ভবানিগঞ্জ। পরবর্তীতে এই নামটি পরিবর্তন করে গাইবান্ধা রাখা হয়। কারণ এই অঞ্চলে আগে প্রচুর গরু পালিত হত। গরুকে গাই বলা হয়ে থাকে , তাই গরু বাধার স্থান হিসাবে এর নাম গাইবান্ধা করা হয়।
প্রশ্নঃ গাইবান্ধা জেলার থানা কয়টি
উত্তরঃ গাইবান্ধা জেলার সাতটি উপজেলা বা থানা রয়েছে।