জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত | জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

5/5 - (1 vote)

জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি এবং জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত সেই সম্পর্কে তো জানবেনই পাশাপাশি এই জেলা সম্পর্কে নানান অজানা তথ্যও জানতে পারবেন। এ জেলার দর্শনিয় স্থান, আয়তন, জনসংখ্যা, বিখ্যাত খাবার সহ সব তথ্য জানানো হবে।

জয়পুরহাট জেলায় রয়েছে অসংখ্য জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং প্রাচীন সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। আজকে আমরা জানব জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত, জয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং থানা কয়টি ও কি কি বিস্তারিত।

জয়পুরহাট জেলা

জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত একটি জেলা। জেলাটি প্রধানত কৃষিপ্রধান, কারণ এর চারপাশে সবুজ গাছপালা এবং বেশ কয়েকটি নদী ও উপনদী রয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা। জয়পুরহাট জেলার প্রধান শহর হলো জয়পুরহাট সদর। এই জেলাটির উত্তরে রয়েছে পাকিস্তানের প্রশাসিত কশ্মীর অঞ্চল। জয়পুরহাট জেলাটির মোট আয়তন ২,৭৮৬.৫০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১,৫৬,৩৫০ জন।

জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত
জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত

জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। এখানে বিখ্যাত জামে মসজিদ, পাহাড়ি মন্দির, ভবনবিহার সহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। জয়পুরহাট জেলাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দেখতে অনেক আকর্ষণীয়।

মোট পাঁচটি উপজেলা নিয়ে এই জয়পুরহাট জেলা গঠিত। জেলাটির একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে এবং এখানে ছোট সোনা মসজিদ সহ অসংখ্য প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে, যা মুঘল যুগের। এ জেলার উত্তরে দিনাজপুর জেলা, দক্ষিনে বগুড়া ও নওগাঁ জেলা, পূর্বে গাইবান্ধা জেলা এবং পশ্চিমে নওগাঁ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত।

জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত

জয়পুরহাট জেলা সুতা ক্রয়-বিক্রয়ের হাটের জন্য বিখ্যাত ছিল। সময়ের পরিক্রমায় সে হাট এখন হারিয়ে গেছে। তবে জয়পুরহাট ভবনবিহার মন্দির, পাহাড়ি মন্দির, তারাঘাট জামে মসজিদ এবং পোল্ট্রিশিল্প এর জন্য বিখ্যাত। এছারাও এ জেলা লকমা রাজবাড়ী, নান্দাইল দীঘি, আছরাঙ্গা মসজিদ এবং শাহি কসবা মসজিদ এর জন্য বিখ্যাত।

  • জামে মসজিদ: জয়পুরহাটের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আকর্ষণ হলো জামে মসজিদ। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদের মধ্যে অন্যতম। এটি তারাঘাট উপজেলার করিমউদ্দিনপুর গ্রামে অবস্থিত। এই মসজিদটি সালেহ বউয়া রাজা এবং উন্নত শাসন দলের একজন সরকারি কর্মকর্তার নামে জানা হয়।
  • পাহাড়ি মন্দির: জয়পুরহাটের অন্যতম আকর্ষণ হলো পাহাড়ি মন্দির। এটি জয়পুরহাট থেকে লিখনা বাজার এলাকার নিকট অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাথর মন্দির হিসাবে পরিচিত।
  • ভবনবিহার: জয়পুরহাটে ভবনবিহার নামে একটি ঐতিহ্যবাহী মন্দির রয়েছে।
জেনে নিনঃ বাংলাদেশের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

তাই অনেকেই যারা জানতে চান যে, জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত? উত্তরঃ জয়পুরহাট পোল্ট্রিশিল্প এর জন্য বিখ্যাত। জয়পুরহাট চটপটি এর জন্যও বিখ্যাত। এছাড়াও প্রধান অর্থকরি ফসলের মধ্যে লতিরাজ, কলা, ধান ইক্ষু অন্যতম। এ জেলার জামালগঞ্জে ১৯৭৩ সালে প্রায় ১১ একর জমির উপর নির্মিত হয় জেলার সরকারি হাঁস মুরগির খামার। সেই থেকে শুরু হয় পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদন। এভাবেই জয়পুরহাট জেলা বিখ্যাত হয়ে উঠে সকলের কাছে।

জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

  • বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কৃতি সন্তানের জন্ম এই জয়পুরহাট জেলায়। জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের মধ্যে অন্যতম হলেন কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খানম,পাগলা পির দেওয়ান সমিরুদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খন্দকার অলিওজ্জামান আলম।

এছারাও রয়েছেনঃ

  1. মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ
  2. রামদেও বাজলা
  3. অধ্যাপক মজিবুর রহমান
  4. দেবদাস শামসুদ্দিন
  5. হিরা আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরি

জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি এবং জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত তা সম্পর্কে জানলেন। চলুন এবার জয়পুরহাট এর দর্শনিয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিই বিস্তারিতভাবে।

জয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান

১।লকমা রাজবাড়ী

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম করিয়া গ্রামের ঐতিহাসিক লকমা রাজবাড়ি অবস্থিত।বাড়িটিতে বর্তমানে লকমা চৌধুরীঢ় নাতি সহ উত্তরাধিকারী ও স্থায়ী বাসিন্দার সমন্বয়ে ৪২ জন সদস্য কমিটি করে দেখাশোনা করে ২০০ থেকে ৩০০ বছর পূর্বে বাড়ি নির্মাণ হয় এবং বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫ বিঘা জমি রয়েছে উক্ত জমিতে বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান দেখা যায়।

দালান দুটির একটি ঘোড়াশাল এবং অপরটি হাতিশাল ছিল।তার একটু সামনেই মাটির একটি ভিটি রয়েছে সেখানে বহুতল ভবনের অবস্থান।জনশ্রুতি আছে যে ভবনের কিছুটা অংশ মাটির নিচে ডেবে গেছে।লকমা চৌধুরী বাড়ির পূর্ব পাশে কর্মচারীর ঘর ও কবরস্থান রয়েছে।বর্তমানে রাজবাড়ীটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে এখনো প্রতিদিন অনেক মানুষ স্বচক্ষে দেখার জন্য আসেন।

২। নান্দাইল দিঘি

জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন আটরাঙ্গা দীঘি এর আয়তন ২৫.৫০ একর। ধারণা করা হয় প্রায় ৪০০ বছর পূর্বের ১১ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০৭০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এই দীঘিটি খনন করা হয়। অনেকের মতে তাহিরপুর রাজপরিবারের সদস্য এ দিঘি খনন করেছিলেন।

১৯৯২ সালে এই দিঘিটি পুনরায় খনন করা হয় যেখানে ১২ টি মূর্তি পাওয়া গেছে যা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। দিঘির চারদিকে অসংখ্য গাছপালা এবং এর স্বচ্ছ পানি এক মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে যা সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে এখানে আসা ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের।

৩। হিন্দা-কসবা শাহি জামে মসজিদ

হিন্দা-কসবা শাহি জামে মসজিদ বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় অবস্থিত ইসলামিক স্থাপত্য শিল্পের ছোঁয়ায় নির্মিত অন্যতম মসজিদ। জয়পুরহাট সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামে এ মসজিদটি অবস্থিত। অনেকেই জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত এই প্রশ্নের জবাবে এর নাম উল্লেখ করে থাকেন।

বাংলা ১৩৬৫ সালে বাগমারি পির পরিচিত চিশতিয়া তরিকার অন্যতম পীর আব্দুল গফুর চিশতী রাহমাতুল্লাহের নির্দেশে মাওলানা আব্দুল খালেক চিশতী আমলে তারই তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়।মসজিদটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য এর অবকাঠামো।

বাংলাদেশের সকল দর্শনিয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন

মোগল আমলের আকৃতিতে নির্মিত বেশিরভাগ মসজিদের বাইরের দেয়ালের পোড়ামাটির আস্তরণ দেখা যায় কিন্তু এই মসজিদের বাইরে আস্তরণে পরিলক্ষিত হয় কাচ ও চিনামাটির সমন্বয় বিভিন্ন নকশা।সূর্যের আলো পরতেই এই মসজিদটির ঝলমলে নজরকাড়া রুপ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের কথা চিন্তা করে এর ৫টি গম্বুজ তৈরি করা হয়েছে।

মাঝের বড় একটি ও চারপাশের চারটি ছোট গম্বুজ রড ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের উত্তর পাশে ৪০ ফুট লম্বা মিনার রয়েছে।মিনারটির নিচে একটি ছোট কক্ষ আছে যেখান থেকে আজানের ব্যবস্থা করা আছে। মিনারের উপরে মাইক স্থাপন করা আছে যেখান থেকে আজানের ধ্বনি এলাকায় মুসল্লিদের নামাজে আহ্বান করা যায়।পূর্ব পাশে রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বখতির চারজন শীর্ষের মাজার।

এছারাও রয়েছেঃ

  • জয়পুরহাট চিনিকল
  • জামালগঞ্জ কয়লা খনি
  • পাথরঘাটা
  • ভীমের পান্টি
  • দুয়ারী ঘাট
  • বিলের ঘাট
  • শিব মন্দির এবং
  • পাগলা দেওয়ান বদ্দভুমি সহ অনেক কিছু।

জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত, বিখ্যাত বেক্তি এবং দর্শনিয় স্থান সম্পর্কে জানা হল চলুন এবার কিছু অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

জয়পুরহাট জেলার থানা কয়টি

জয়পুরহাট জেলা মোট ৫ টি উপজেলা ৫ টি পৌরসভা ও ৩২ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।এছাড়াও এখানে ৯৮৮টি গ্রাম ও ৭৬৬ টি মৌজা রয়েছে। আমরা জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত আবং জয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানছি। আরও জেনেছি জয়পুরহাটের বিখ্যাত খাবার সম্পর্কে। এবার চলুন একনজরে জেনে নিই জয়পুরহাট জেলার থানা কয়টি এই সম্পর্কে।

জয়পুরহাট জেলার থানা সমূহঃ

  • জয়পুরহাট সদর
  • আক্কেলপুর
  • ক্ষেতলাল
  • কালাই এবং
  • পাচবিবি উপজেলা।

প্রশ্নঃ জয়পুরহাট কিসের জন্য বিখ্যাত ?

উত্তরঃ জয়পুরহাট জেলা মূলত পোল্ট্রিশিল্প এর জন্য বিখ্যাত।এজন্য জয়পুরহাট জেলাকে সোনালী রাজধানী বলা হয় কারণ দেশের সবচেয়ে বেশি সোনালী মুরগি এবং খামারি এই জেলায়।জয়পুরহাট জেলায় তৈরি চটপটি এর জন্যও বিখ্যাত।

প্রশ্নঃ জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের নাম কি ?

উত্তরঃ জয়পুরহাট জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের মধ্যে অন্যতম কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম। এছারাও রয়েছেন মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ, রামদেও বাজলা এবং অধ্যাপক মজিবুর রহমান।

প্রশ্নঃ জয়পুরহাট জেলার থানা কয়টি ?

উত্তরঃ জয়পুরহাট জেলার থানা ৫ টি।

প্রশ্নঃ জয়পুরহাটের বিখ্যাত খাবার কি ?

উত্তরঃ জয়পুরহাটের বিখ্যাত খাবার চটপটি ও লতা।

প্রশ্নঃ জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের নাম ?

উত্তরঃ জয়পুরহাট জেলা প্রশাসকের নাম সালেহিন তানভির গাজি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *