জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত | জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

5/5 - (3 votes)

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত সেটি আমরা অনেকেই জানিনা এছাড়াও জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি বর্গ সম্পর্কেও আমরা জানি। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা কিংবা ভাইবা তে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তখন আমরা আটকে যাই। তাই জামালপুর সম্পর্কে অজানা সব তথ্য নিয়ে আজকের আলোচনা।

সত্যি কথা বলতে গেলে ইসলামপুরের কাঁসার বাসন, মাদারগঞ্জের মাছ, নান্দিনার পান, বকশিগঞ্জের নকশী কাথা, মেলান্দহের তামা জামালপুর জেলা কে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। তবে এসব ছাড়াও এ জেলার রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

জামালপুর জেলা

ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা হচ্ছে জামালপুর। জামালপুর হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। জামালপুর জেলার পূর্ব নাম হচ্ছে সিংহজানি। জামালপুর জেলার মোট আয়তন ২০৩১. ৯৮ বর্গ কিলোমিটার। একই সাথে এই জেলার মোট জনসংখ্যা ২৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮১০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১১ লক্ষ ৭৪ হাজার ১০৪ জন এবং মহিলা ১২ লক্ষ ১০ হাজার ৭০৬ জন।

হযরত শাহজামাল রহমাতুল্লাহি আলাই এর আগমনের ফলে এই অঞ্চলের নাম সিংহজানি থেকে হয় জামালপুর। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুর ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। জামালপুর জেলার সরকারি ওয়েবসাইট হল https://jamalpur.gov.bd/

এ জেলার উত্তরে ব্রহ্মপুত্র এবং শেরপুর জেলা, দক্ষিন টাঙ্গাইল জেলা এবং মধুপুরের গড় অবস্থিত। এই জেলার পূর্বপাশে ময়মনসিংহ জেলা এবং পশ্চিমের যমুনা নদী ও গাইবান্ধা জেলা অবস্থিত।

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত
জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

জামালপুর জেলা মূলত বুড়ি মা দোকানের রসমালাই ছানার পোলাও ও ছানার পায়েস এবং পিঠালি বা মিল্লির জন্য বিখ্যাত। শুধু তাই নয় এ জেলা তৈরি হস্ত শিল্পের জন্যও বিখ্যাত। বকশীগঞ্জ উপজেলার শেখ হাসিনা নকশী পল্লি ও দেশের সব থেকে বড় সার কারখানা (যমুনা) জামালপুর কে বিখ্যাত করে তুলেছে।

ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য ও রপ্তানি অন্যতম কর্মকান্ড হচ্ছে এই জামালপুর জেলা। শুধু এসবের জন্যই জামালপুর জেলা বিখ্যাত নয় জামালপুরে রয়েছে হাজারো বছরের ঐতিহ্য ঘেরা নানান নিদর্শন।

বিখ্যাত নিদর্শনঅবস্থান
১। দয়াময়ী মন্দিরজামালপুর সদর উপজেলার প্রায় সাড়ে তিনশত (৩৫০) বছরের পুরনো দয়াময়ী মন্দির।
২। হযরত শাহ জামাল (রহঃ) মাজারজামালপুর সদর উপজেলার জেনারেল হসপিটাল এর পাশে পাথালিয়া এরিয়াতে অবস্থিত সুফি সাধক হযরত শাহজাহান্নুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার নামে মাজার শরিফ।
৩। কাসার তৈজসপত্রজামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা কাসার তৈরি আসবাবপত্রের জন্য অনেক অনেক জনপ্রিয়।
৪। যমুনা সার কারখানাজামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকায় রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সার কারখানা।
৫। গান্ধী আশ্রমগান্ধী আশ্রম জামালপুর এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহন করে। এটি জামালপুর সদর উপজেলার কাপাসহাটিয়া গ্রামে অবস্থিত।
৬। দেওয়ানগঞ্জ চিনি কলদেওয়ানগঞ্জ চিনি কল দেশের অন্যতম বড় একটি চিনি কল। যেটি দেশের চিনির চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।
৭। মালঞ্চ মসজিদমেলান্দহ উপজেলায় মালঞ্চ শিশু ও চক্ষু হাস্পাতাল কমপ্লেক্সে এই সুন্দর মসজিদটি অবস্থিত।৮
৮। নান্দিনার পানবাংলাদেশে যতগুলো জায়গায় উন্নত মানের পান চাষ হয় তাদের মধ্যে নান্দিনা অন্নতম।
৯। হরিশচন্দ্র দীঘিজামাপুর সদর উপজেলায় রয়েছে অনেক বছরের পুরনো একটি দীঘি যার নাম হরিশচন্দ্র দীঘি।
১০। পলিমাটিব্রহ্মপুত্র নদ এর পলিমাটি এই অঞ্চলের জমিকে উর্ভর করে তুলেছে।
জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

এছারাও রয়েছেঃ

  • হযরত শাহ কামাল (রহঃ) মাজার শরীফ
  • নরপাড়া দুর্গ
  • মাদারগঞ্জের মাছ
  • বকশিগঞ্জের নকশী কাথা
  • ছনকান্দার বালু

জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মির্জা আজম জিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। এছারাও মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ, বিএনপি সাবেক মহাসচিব আব্দুস সালাম তালুকদার, শহীদ আমানুল্লাহ কবির, সৈয়দ সদরুজ্জামান হেলাল, মোঃ নুরুল ইসলাম অন্যতম।

জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

এছাড়াও রয়েছেন মিজানুর রহমান খান বশির আহমেদ মতিউর রহমান যারা বীর প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত প্রাপ্ত এদেরকে জামালপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি বলা হয়ে থাকে।

জামালপুরের বিখ্যাত ব্যক্তি ( সেরা ১০ জন ) দের তালিকাঃ

  1. মির্জা আজম চৌধুরী যিনি বর্তমান সংসদ সদস্য।
  2. ফারুক চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য
  3. আনোয়ার হোসেন যিনি বাংলা নাটকের মুকুট বিহীন সম্রাট নামে পরিচিত
  4. ডঃ আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
  5. নজরুল ইসলাম বাবু যিনি বিখ্যাত গীতিকার ও শিল্পী
  6. মরহুম আব্দুল করিম সাবেক স্পিকার
  7. মরহুম অ্যাডভোকেট আনোয়ারুজ্জামান যিনি একটা ভাষা সৈনিক
  8. নাট্যকার আমজাদ হোসেন
  9. নাট্যকার গিয়াস উদ্দিন মাস্টার
  10. আব্দুল্লাহ আল মামুন যিনি প্রয়াত নাট্য ব্যক্তিত্ব।

বিখ্যাত খাবার

জামালপুরের মানুষ অনেক ভোজন প্রিয়। এ জেলায় রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও নিজস্ব রন্ধন প্রণালী। জামালপুরের তৈরি পিঠা পায়েস ও ছানার পায়েসের পাশাপাশি এখানকার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার হল মিল্লী-ভাত বা পিঠালি যা স্থানীয় ভাষায় মেন্দা নামে পরিচিত। এ জেলার জামাই মেলার জামাই পিঠা ও অনেক জনপ্রিয়।

ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি শুধুমাত্র জামালপুর জেলাতে পাওয়া যায়। যদিও কালের পরিক্রমায় এই খাবারটি সারা বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়েছে। এটি মৃত মানুষের চল্লিশা বা মিলাদ মাহফিলে প্রধানতম খাবার হিসেবে পরিচিত।

জামালপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত, বিখ্যাত ব্যক্তি, বিখ্যাত খাবার ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা জানলাম। তো চলুন এক নজরে জামালপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন।

জামালপুর জেলায় বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে হযরত শাহজামাল রহমাতুল্লাহি আলাই এর মাজার শরীফ, বানুয়া কামালপুর ক্যাম্প, লাউচাপড়া, লুইস ভিলেজ পার্ক এন্ড রিসোর্ট এবং গান্ধী আশ্রম অন্যতম। জামালপুর সদর থানার ফৌজদারি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকে গড়ে উঠেছে এক নতুন দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই ফৌজদারী এলাকার বালুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

এগুলো ছাড়াও জামালপুরের আরো কিছু দর্শনীয় স্থানের মধ্যেঃ

  • হযরত শাহ কামাল (রহঃ) এর মাজার শরীফ, যেটি কাচারিপাড়ায় অবস্থিত
  • হযরত শাহ জামাল (রহঃ) এর মাজার শরীফ, জেনারেল হাসপাতালের পাশে অবস্থিত।
  • প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো দয়াময়ী মন্দির, যেটি জামালপুর সদরে অবস্থিত
  • লুইস ভিলেজ পার্ক এন্ড রিসোর্ট, জটিল জামালপুর জেলার সদর থানার বেলটিয়াতে অবস্থিত।
  • মেলান্দহ উপজেলার কাপাস হাঁটিয়া গ্রামে অবস্থিত।
  • শেখ হাসিনা নকশী পল্লী বকশীগঞ্জ অবস্থিত।
  • বকশীগঞ্জ উপজেলায় আরেকটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট হচ্ছে লাউচাপড়া।

জামালপুর কিভাবে যাবেন

সড়কপথে কিংবা রেলপথে, উভয় ভাবেই জামালপুর আসা যাবে। তবে সবচেয়ে ঝামেলা মুক্ত ভ্রমণ হচ্ছে ট্রেন ভ্রমণ। কেননা জামালপুরে তিনটি আন্তঃনগর লাক্সারিয়াস ট্রেনের পাশাপাশি মোট সাতটি ট্রেন।

জেনে নিনঃ জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩

উল্লেখযোগ্য নদী সমূহের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র যমুনা এবং ঝিনাই নদী অন্যতম। অনেকেই জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে, জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত ? উত্তরঃ জামালপুর জেলা যমুনা সার কারখানা, ঝিল বাংলা সুগার মিল, শাহ জামালের মাজার, দয়াময়ী মন্দির, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং লাউচাপড়া পর্যটন কেন্দ্রের জন্য বিখ্যাত।

কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে মূলত প্রধান ফসলের মধ্যে ধান, পাট ও সরিষা বীজ অন্যতম। মরিচ, চিনাবাদাম, এবং গম ও প্রচুর পরিমানে চাষ হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত পন্য ও রপ্তানির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হল এই জামালপুর।

অজানা কিছু তথ্য

জামালপুর জেলায় মোট ৫৮৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও ৩৪৭ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঁচটি সরকারি কলেজ, ৩১ টি বেসরকারি কলেজ, ১৮০ টি মাদ্রাসা, ১৬টি ভোকেশনাল স্কুল সহ দুটি (০২) হোমিওপ্যাথিক কলেজ এবং ১ টি ফিসারিজ কলেজ রয়েছে।

জামালপুর জেলার উপজেলা কয়টি

জামালপুর জেলায় মোট সাতটি উপজেলা রয়েছে। জামালপুর সদর, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, এবং সরিষাবারি উপজেলা।

জামালপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

জামালপুর জেলা ঐতিহ্যবাহী মিল্লি ভাত বা পিঠালি এবং বুড়িমা দুকানের দই ও ছানার মিষ্টান্ন এর জন্য বিখ্যাত। এছারাও শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা নকশী পল্লী, যমুনা সার কারখানা ইত্যাদির জন্যও বিখ্যাত।

জামালপুর কিসের জন্য বিখ্যাত

কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে মূলত প্রধান ফসলের মধ্যে ধান, পাট, আখ, সরিষা বীজ, চিনাবাদাম, এবং গম হয়। ভারত থেকে আমদানিকৃত পন্য ও রপ্তানির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হল জামালপুর। দেশের সবথেকে বড় সার কারখানা এখানেই রয়েছে।

জামালপুরের সাক্ষরতার হার কত ?

সাক্ষরতার হার জামালপুরে ৬১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

জামালপুর জেলার পূর্ব নাম কি ?

জামালপুর জেলার পূর্ব নাম সিংহজানি। এই নাম এখনও মৌজা বা জমির দলিলে লক্ষ করা যায়।

জামালপুর সদর কত কিলোমিটার?

জামালপুর সদর উপজেলার মোট সড়ক পথের দৈর্ঘ্য ১০৪৩.৮ কিলোমিটার, রেলপথ আছে ৪৮.৫ কিলোমিটার এবং নৌপথ আছে ৮৬ নটিক্যাল মাইল।

জামালপুর কবে স্বাধীন হয়?

জামালপুর জেলা স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর। ভানুয়া কামাল মুক্তি ক্যাম্প এ জেলার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগিয়ে তুলে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুর জেলা কত নং সেক্টরের অধীনে ছিল?

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুর জেলা ১১ নং সেক্টরের অধীনে ছিল।

Similar Posts