ময়মনসিংহ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এবং বিখ্যাত ব্যক্তি 2024
ময়মনসিংহ বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা। ময়মনসিংহ কিসের জন্য বিখ্যাত এবং ময়মনসিংহ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি জানার আগে চলুন ময়মনসিংহ জেলা সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জেনে নিই।
অবস্থানগত কারণে এটি বাংলাদেশের বিশেষ শ্রেণীভূক্ত জেলা। এই জেলা ছিল তৎকালীন ভারত উপমহাদেশের বৃহত্তম জেলা। ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য দক্ষিনে গাজীপুর জেলা পূর্বে নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর এবং জামালপুর জেলা অবস্থিত।
ময়মনসিংহ কিসের জন্য বিখ্যাত
ময়মনসিংহ জেলা মূলত মুক্তাগাছার মন্ডা,মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ানা মদীনা,দীনেশচন্দ্র সেন, চন্দ্রাবতী, কবিকঙ্ক,জাকির মিয়ার জিলাপি এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও ময়মনসিংহ কবি নজরুলের সৃতির জন্য বিখ্যাত।
- ময়মনসিংহ জেলা মূলত মৈমনসিংহ গীতিকা, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা, দীনেশ চন্দ্র সেন, কবিকঙ্ক, জাকির মিয়ার জিলাপি ও মুক্তাগাছার মন্ডার জন্য বিখ্যাত বলা হয়। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলায় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এই ছেলের দর্শনীয় স্থানগুলোও বিখ্যাত করেছে।
জামালপুর ও শেরপুর জেলার অজানা তথ্য জেনে নিন
ময়মনসিংহ জেলা
ময়মনসিংহ জেলা ( Mymensingh Zila) বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা। এ জেলায় অনেকগুলো নদী আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, কাঁচামাটিয়া নদী এবং সুতিয়া নদী। সংস্কৃতিক উৎসব, লোকগীত, লোকগীতের তীর্থস্থান হিসাবে জনপ্রিয় এই ময়মনসিংহ জেলা।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাংলাদেশের চালের উৎপাদন তিন কোটি ৬০ লাখ টন ছাড়িয়ে যায় এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের তৃতীয় চাল উৎপাদনকারী বাংলাদেশ। এর বড় একটা অংশ যোগান দিয়ে ছিল ময়মনসিংহ জেলা।
ময়মনসিংহ নিয়ে অজানা কিছু তথ্য
- মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ পঞ্চম। মোট দেশজ উৎপাদনের জিডিপিতে মৎস্য সম্পদের অবদান ৪%। আর মাছ চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে ময়মনসিংহ জেলা। দেশের শতকরা ২২ ভাগ মাছ উৎপাদন হয় ময়মনসিংহ জেলায় এর সিংহভাগই উৎপাদন হয় ময়মনসিংহের ত্রিশালে।
- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ,মন্দির, গির্জা এর অন্যতম সংগ্রহ শালা এই ময়মনসিংহ।যার ভালো একটি উদাহরন ময়মনসিংহ বড় মসজিদ।
- ময়মনসিংহ জেলায় রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ টি মসজিদ।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেলার শিক্ষার হার ৬৮%
- প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৬৯২ টি।
- মাদ্রাসা রয়েছে ২৪১ টি।
- মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ ডিগ্রি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ ডিগ্রি কলেজ ইঞ্জিনারিং কলেজ একটি কামিল মাদ্রাসা।
- ফাজিল মাদ্রাসা ৪৭টি এবং
- আলিম মাদ্রাসা ও দাখিল মাদ্রাসা প্রায় ৩০০ টি।
শিল্প সাহিত্য-সংস্কৃতি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সূতিকাগার বৃহত্তম ময়মনসিংহ জেলা। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকের ঢাকা বিভাগের জেলা ময়মনসিংহ কে বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেন।
২০১৫সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়।
জেনে নিন ময়মনসিংহ বিভাগের কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
ময়মনসিংহ জেলার ইতিহাস
ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয় প্রায় ১৭৮৭ সালের দিকে। ময়মনসিংহ শহরের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। ময়মনসিংহ বিভাগ দেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ। ময়মনসিংহ জেলাটি মোট ১৩টি উপজেলা ২৭ টি পৌরসভা ও ৩৫১ টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত।
আপনি কি শিক্ষা, ট্রেনের খবর, ট্রাভেল গাইড, মার্কেট গাইড সহ সকল জেলার আপডেট পেতে চান ? তাহলে আপনি উঁকি মারতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ এ!!
ময়মনসিংহ বিভাগের মোট আয়তন ১০ হাজার ৬৬৮ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৫৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫২ জন। যাদের মধ্যে পুরুষ ২৮ লক্ষ ৯৭ হাজার ৮৮০ জন ও মহিলা ২৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯৯৭ জন এবং ৪৭১ জন হিজড়া।
ময়মনসিংহ নামকরণের ইতিহাস
ইতিহাসবিদদের মাঝে ভিন্ন মত প্রচলিত আছে ময়মনসিংহ নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে। আর ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নকশার জন্য নতুন দল গঠন করেছিলেন।
সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের লিস্ট করা হয়। নাসিরাবাদ নামটিও আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোথাও উল্লেখ করা হচ্ছেনা।
১৭৭৯ সালে প্রকাশিত রেনেল ম্যাপে মমিশিং নামটি বর্তমান ময়মনসিংহ অঞ্চলকে নির্দেশ করে। তার আগেই আইন-ই-আকবরীতে মমেনশাহি হিসেবে লিখিত আছে। এসব বিবেচনায় বলা যায় সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের পূর্ব থেকেই ময়মনসিংহ নামে প্রচলিত ছিল।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের সমৃদ্ধ জমিদারগণ সরকারের কাছে জেলার নাম ময়মনসিংহ রাখার আবেদন করলে সরকার তা গ্রহণ করে নেন আর এভাবেই জেলাটির নাম হয়ে যায় ময়মনসিংহ।
ময়মনসিংহ জেলা যা কিনা ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত ভারতবর্ষে সর্ববৃহৎ জেলা ছিল তার আকার ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসছে। ময়মনসিংহ জেলার নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে ভিন্ন মত প্রচলিত আছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মোগল আমলের মোমেনশাহী নামে একজন শাসনকর্তা ছিলেন নাম অনুসারে নামকরণ মোমেনশাহী হয় পরবর্তীতে তা ময়মনসিংহ নাম লাভ করে।
- বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ, তাঁর নিজ পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্য এই অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন। সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। নাসিরাবাদ নাম পরিবর্তন হয়ে মমিসিং, তারপর আইন ই আকবরই তে মোমেনশাহী থেকে পরবর্তীতে ময়মনসিংহ হয় একটি ভুলের কারণে।
ময়মনসিংহ বিভাগে কয়টি জেলা
ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ৪ টি জেলা রয়েছে। সেগুলো হল জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা এবং ময়মনসিংহ জেলা।
- ময়মনসিংহ
- জামালপুর
- শেরপুর
- নেত্রকোনা
ময়মনসিংহ জেলার উপজেলা সমূহ
- ময়মনসিংহ সদর
- ত্রিশাল
- ভালুকা
- ঈশ্বরগঞ্জ
- নান্দাইল
- ফুলপুর
- হালুয়াঘাট
- ধোবাউড়া
- মুক্তাগাছা
- গফরগাঁও
- গৌরীপুর
- তারাকান্দা।
ময়মনসিংহ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি বর্গ
ময়মনসিংহ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি এর মধ্যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, সঙ্গীত শিল্পি আব্দুল জব্বার, আরিফিন শুভ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অন্যতম। সাংবাদিক মুজিবুর রহমান, নির্মলেন্দু গুণ এর মতো বিখ্যাত ব্যক্তি দের জন্মস্থান এই ময়মনসিংহ জেলাতে।
এছারাও রয়েছেনঃ
- বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন
- ভাষা আন্দোলনের শহীদ আব্দুল জব্বার
- ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী মিতালী মুখার্জী
- চলচ্চিত্র অভিনেতা আরিফিন শুভ
- বাংলাদেশের আলোচিত একজন সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন
- বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
এই তালিকায় আরও রয়েছেন অনেক গুরুত্তপূর্ণ মানুষ।যাদের জন্ম এই ময়মনসিংহ বিভাগেই। যুগের পর যুগ ধরে তারা এই জেলা কে এক ও অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। চলুন এক নজরে তাদের সম্পর্কে জেনে নিই।
ময়মনসিংহ বিভাগের বিখ্যাত ব্যক্তি
বিখ্যাত ব্যক্তি | পেশা |
---|---|
কানা হরিদত্ত | মনসামঙ্গল কাব্যের আদি |
সুন্দরী চৌধুরী | অগ্নিকন্যা |
চন্দ্রকুমার দে | লেখক |
অক্ষয় কুমার | নাট্যকার, লেখক, অভিনেতা |
নাসরিন | অভিনেত্রী |
আরেফিন শুভ | মডেল, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা |
মুক্তিযোদ্ধা হারুন | জামালপুর জেলার প্রখ্যাত সাংবাদিক সাহিত্যিক ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা |
আনোয়ার হোসেন | অভিনেতা |
মনসুর বয়াতি | নেত্রকোনা জেলার পল্লী কবি ও গায়ক |
যতীন সরকার | প্রগতিবাদী চিন্তাবিদ ও লেখক |
নির্মলেন্দু গুণ | প্রখ্যাত কবি ও শিল্পী |
হেলাল হাফিজ | জনপ্রিয় আধুনিক কবি |
হুমায়ূন আহমেদ | জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক |
আহসান হাবীব | কার্টুনিস্ট |
ময়মনসিংহ জেলার দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্য মণ্ডিত জেলা এই ময়মনসিংহ জেলা। এ জেলায় অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তাগাছার রাজবাড়ী।, শশীলজ, ময়মনসিংহ জাদুঘর, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, রামগোপালপুর জমিদারবাড়ি ও বোটানিক্যাল গার্ডেন।
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
- মুক্তাগাছার রাজবাড়ী
- শশীলজ
- ময়মনসিংহ জাদুঘর
- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ
- রামগোপালপুর জমিদারবাড়ি
- বোটানিক্যাল গার্ডেন
- ময়মনসিংহ টাউন হল
- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
ঘুরে আসুন ময়মনসিংহ বোটানিক্যাল গার্ডেন, জেনে নিন সময়সূচী
ময়মনসিংহ জেলার আয়তন কত ?
ইতিহাস পর্যালোচনায় ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার সৃষ্টি হয়। এ জেলার মোট আয়তন প্রায় ৪৩৬৩ দশমিক ৪৯ বর্গকিলোমিটার। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প কলকারখানা ১৪১টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুইটি শিল্পনগরী ময়মনসিংহে এবং বাকি প্রায় ৫০টি ভালুকায় অবস্থিত।
ময়মনসিংহ জেলার জনসংখ্যা কত
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী ময়মনিসংহ সিটি কর্পোরেশন জনসংখ্যা ৫,৭৬,৭২২। লিঙ্গভিত্তিক এ জেলার মোট জনসংখ্যা ৫৮,৯৯,০৫২ জন।
ময়মনসিংহ কিসের জন্য বিখ্যাত খাবার
ময়মনসিংহ জেলা মূলত মুক্তাগাছার মন্ডা,মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ানা মদীনা,দীনেশচন্দ্র সেন, চন্দ্রাবতী, কবিকঙ্ক,জাকির মিয়ার জিলাপি খাবার এর জন্য বিখ্যাত।
Com